বিলেতের ঐতিহ্যবাহী কমিউনিটি সংগঠন বিশ্বনাথ প্রবাসী এডুকেশন ট্রাস্ট ইউকের বাংলাদেশে নিবন্ধন আইনসম্মত এবং বৈধ বলে রায় দিয়েছেন আদালত। গত ২৭ আগস্ট প্রদত্ত রায়ে আদালত, রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে ট্রাস্ট বাংলাদেশে বৈধভাবে তার কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ পেয়েছে বলে আইনি অভিমত ব্যক্ত করেছেন। এর আগে উচ্চ আদালতেও এ সংক্রান্ত রিটের রায় বিবাদীদের পক্ষে আসে।
দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের সর্বশেষ আপডেট জানাতে এবং অবিলম্বে ট্রাস্টের বিজিএম ও নির্বাচনের দাবি জানিয়ে পূর্ব লন্ডনে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ২০১৪-১৬ সালে নির্বাচিত ট্রাস্টের বোর্ড অব ম্যানেজমেন্ট কমিটির পক্ষে সম্প্রতি এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। উল্লেখ্য এই কমিটির আমলেই ট্রাস্টের নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন হয়।
ঐ সময়ের নির্বাচিত সভাপতি মির্জা আসহাব বেগের সভাপতিত্ব এবং পরিচালনায় সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের প্রাক্তন সেক্রেটারি নজরুল ইসলাম। এসময় উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা ট্রেজারার মোঃ আব্দুল মজিদ, সাবেক সহ সভাপতি মনির উদ্দিন বশির, ট্রাস্টি মোঃ রইস আলী, আবুল কালাম আজাদ, মনির হোসেন, ফারুক মিয়া, বর্তমান কমিটির সহ ট্রেজারার আবদুল ওদুদ সাহেল, গুলজার খান, মোঃ সুফান আলী বারী, মোঃ ওয়াহিদ আলী, আবদুস সোবহান, আবদুর রহিম রঞ্জু প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, প্রায় ৩০ বছর আগে ১৯৯৪ সালে লন্ডনে আমাদের অগ্রজ, প্রবীণ মুরব্বীদের প্রচেষ্টায় বিশ্বনাথ প্রবাসী এডুকেশন ট্রাস্ট গঠন করা হয়। বিশ্বনাথের গরীব ও মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের বৃত্তি প্রদানের মাধ্যমে এলাকার শিক্ষার বিস্তারে সহযোগিতা করা ছিল এর অন্যতম উদ্দেশ্য। শুরু থেকেই দুই বছর পর পর ট্রাস্টের বোর্ড ম্যানেজমেন্ট কমিটি গঠন করার বিধান অনুসরণ করা হচ্ছে।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, দীর্ঘদিন থেকেই বাংলাদেশে ট্রাস্টের নিবন্ধনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছিলো। এরই অংশ হিসেবে ২০১৪-১৬ নির্বাচনের পর বাংলাদেশে ট্রাস্টের নিবন্ধনের বিষয়টি বোর্ডের প্রথম এজেন্ডা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে আরো দুই/তিনটি বোর্ড মিটিংয়ে বিষয়টি নিয়ে আরো বিস্তারিত আলোচনা হয়। পরে ২০১৫ সালের ২২ নভেম্বর বার্মিংহামে অনুষ্ঠিত এজিএম-এ উপস্থিত ট্রাস্টিদের মতামতের ভিত্তিতে বাংলাদেশে ট্রাস্টের নিবন্ধনকে অনুমোদন প্রদান করা হয়। গৃহিত এই সিদ্ধান্ত মোতাবেকই ট্রাস্টের চেয়ার মির্জা আসহাব বেগ এবং সেক্রেটারি নজরুল ইসলাম বাংলাদেশে গিয়ে আইনজীবির পরামর্শ অনুযায়ী ট্রাস্ট এ্যাক্টের আওতায় সংগঠনের রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেন। এতে চেয়ার সেক্রেটারি ছাড়াও ঐ সময়ে বাংলাদেশে অবস্থানকারী আরো পাঁচজন ট্রাস্টি রেজিস্ট্রেশন সম্পাদনকারী হিসেবে অন্তভুক্ত হন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নিবন্ধনের পর দেখা যায়, সংগঠনের কিছুসংখ্যক ট্রাস্টি রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ায় সন্তুষ্ট হতে পারেন নি। তারা এই বলে অভিমত প্রদান করেন যে, এটি বেআইনিভাবে করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, তাঁরা দাবি করেন যে, প্রেসিডেন্ট ও সেক্রেটারি অনিয়মতান্ত্রিকভাবে দশ লাখ টাকা উত্তোলন করে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছেন।
এই বির্তক নিরসনকল্পে (মরহুম) পংকি খানকে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট মেডিয়েশন কমিটি গঠন করা হয় এবং এর ধারাবাহিকতায় দুইটি বিশেষ সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এর মাঝে ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট এসজিএম-এ বাংলাদেশ থেকে প্রদত্ত লিগ্যাল অপিনিয়ন এর ভিত্তিতে সমস্যার সাময়িক সুরাহা হয় এবং নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনে সবার অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।
এর মাঝেই ২০১৭ সালের ৫ ফেব্রæয়ারি ট্রাস্টের বিজিএমে ১৭ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি গঠন করা হয়। এই নির্বাচনের মাধ্যমে মতছির খাঁন সভাপতি, মিছবাহ উদ্দিন সেক্রেটারি ও আজম খানকে ট্রেজারার করে ২০১৭-১৯ সালের জন্য বোর্ড অব কমিটি গঠন করা হয়।
নির্বাচনের পরও যথারীতি নিবন্ধনের বিষয়টি নিয়ে বোর্ড মিটিংয়ে আলোচনা হয় এবং এটি সঠিক কি-না তা নিয়ে বোর্ড সদস্যরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েন। অন্যদিকে নতুন কমিটি দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর পর বিগত বোর্ড কমিটির বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রথমে যুক্তরাজ্যে সলিসিটর নোটিশ প্রদান করে। এই নিয়ে বোর্ডে তীব্র বির্তকের পর সেক্রেটারি মিছবাহ উদ্দিনকে সাসপেন্ড করা, নতুন সংবিধান অনুমোদনসহ সংবিধানের বিপরীতে কাজ করার চেষ্টা করা হয়। এই সমস্ত কারণে চারজন বোর্ড মেম্বার বোর্ড থেকে বেরিয়ে আসেন।
পরে ২০১৯ সালের জুন মাসে একটি ট্রাস্টি সভার মাধ্যমে বর্তমান কার্যকরী কমিটিকে বিভিন্ন সংবিধান বিরোধী কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকা এবং দ্রুত নির্বাচন সম্পন্নের অনুরোধ জানানো হয়।
এতেও কোনো কাজ না হওয়ায় উদ্ভূত পরিস্থিতি নিরসনে মিডিয়েশন কমিটির সর্বশেষ সভা ২০১৯ সালের ৮ জুলাই ব্রিকলেন মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় দুই পক্ষের ট্রাস্টি ও সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান চৌধুরী, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমান ও প্রধান মেডিয়েটর পংকি খান (মরহুম) উপস্থিত ছিলেন। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে একটি গুরুত্বপূর্ণ আপস এবং চারটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
এর কয়েক মাস পর হঠাৎ বর্তমান কমিটির চেয়ার মতছির খাঁন ব্রিকলেন মসজিদের আপসকে সম্পূর্ণ পাশ কাটিয়ে সাবেক চেয়ার, সেক্রেটারিসহ দলিল সম্পাদনকারীদের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে নিবন্ধনটিকে অবৈধ উল্লেখ করে তা বাতিলের জন্য রিট দাখিল করেন। (রিট নং ৯৬৯১/২০১৯)।
এর মাস খানেক পর বর্তমান কমিটির সম্পাদক মিছবা উদ্দিন আমাদের পক্ষ ত্যাগ করে নিবন্ধন বাতিলের আরজি জানিয়ে সিলেট জজকোর্টে আরেকটি মামলা দায়ের করেন। (মামলা নং ৫১/২০)। এই মামলায় বাদি বিবাদিদের কাছ থেকে মামলার সমুদয় খরচ আদায়ের জন্যও আরজিতে উল্লেখ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০২২ সালের ৪ ফেব্রæয়ারি ঢাকা হাইকোর্টে মামলার রায় ২০১৪-১৬ সালে নির্বাচিত বোর্ড অব ম্যানেজমেন্ট কমিটির পক্ষে আসে। ঐ সময়ে মামলার শুনানি থেকে বাদী মতছির খাঁন তার মামলা প্রত্যাহার করেন।
এদিকে, গত ২৭ আগস্ট সিলেট জজকোর্টের রায়েও ট্রাস্টের রেজিষ্ট্রেশন আইনসম্মত হিসেবে উল্লেখ করে মামলাটি খারিজ করা হয়। উপরন্তু বিচারক এই রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে ট্রাস্ট বাংলাদেশে বৈধভাবে তার কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ পেয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিশ্বনাথবাসীর পক্ষ থেকে বর্তমান কমিটির মতছির খাঁন, মিছবা উদ্দিন ও আজম খানের কাছে অনতিবিলম্বে ট্রাস্টের বিজিএমের তারিখ ঘোষণা করার আহ্বান জানানো হয়।